প্রকৃত ইসলামী পোশাক বা সুন্নতি পোশাক কেমন

 Image result for sunnati libas
মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি প্রীয় রাসূল নূরে মুজাসসাম ,হাবীবুল্লাহ , হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে পোশাক মুবারক পড়েছেন সেটাই ইসলামী পোশাক বা সুন্নতি পোশাক বা মুসলমানদের পোশাক।
 
কুরআন শরীফে তাক্বওয়ার লিবাস বা পোষাককে উত্তম পোষাক বলা হয়েছে ।
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন :-
 وَ لِبَاسُ التَّقْوَى ذَالِكَ خَيْرٌ 
অর্থ : এবং তাক্বওয়ার পোষাক, উহাই উত্তম। (সুরা আ‘রাফ/২৬) । 
আর সে তাক্বওয়ার লিবাসই হচ্ছে সুন্নতী পোষাক, যা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজে পরিধান করেছেন । সুবহানাল্লাহ।
 
যারা দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করবে অর্থাৎ যারা মুসলমান হবে, পুরুষ কিংবা মহিলা, তারা কি ধরণের পোষাক পরিধান করবে সে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে । অর্থাৎ একজন মুসলমান তার মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মওত, এমনকি হায়াতের পূর্ব থেকে মওতের পর পর্যন্ত, সে কি খাবে, কি পরবে, কিভাবে চলবে, এক কথায় তার যাবতীয় করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে বলে দেয়া হয়েছে। 
সুতরাং মনগড়া ভাবে কোন কিছু করার তার সুযোগ নেই যে পোষাক বিধর্মী-বিজাতীয়দের সাদৃশ হয় তা পরিহার করা অপরিহার্য। হাদীছ শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে :
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ –
অর্থ : যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত) (আবু দাউদ শরীফ) ।
 
পোষাক হচ্ছে ধর্মের শেয়ার বা প্রতীক । পোষাক পরিধান করার মাধ্যমে দৃশ্যত: একজন লোককে সে কোন ধর্মের অনুসারী চেনা যায় । যদি তাই হয় তাহলে মুসলমান ইসলামী বা সুন্নতী পোষাক বাদ দিয়ে অন্য কোন পোষাক পরতে পারে না । ইসলাম এসেছে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার থেকে । উনি যে পোষাক পরেছেন তা-ই তো ইসলাম ধর্মের তথা মু‘মিন মুসলমানদের পোষাক । উনি কি কখনও শার্ট প্যান্ট বা অন্যান্য পোষাক যা সাধারণ লোক পরে থাকে, এসব পরেছেন ? কখনও না । উনি পরিধান করেছেন নিছফে ছাক্ব, কোনা-বন্দ, কাপড়ের গুটলিযুক্ত, সুন্নতী কোর্তা, সেলাই বিহীন লুঙ্গী ।
 
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন :-
وَ مَا أتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَ مَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا – 
অর্থ : “(আমার রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের জন্য যা এনেছেন, তা আঁকড়ে ধর, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক।” (সুরা হাশর)
সুতরাং একজন মুসলমানকে (সে পুরুষ হোক বা মহিলা হোক) অবশ্যই সুন্নতী পোষাক পরতে হবে, যা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরেছেন এবং উনার নির্দেশ ও অনুসরণে উম্মুহাতুল মু‘মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম ও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পড়েছেন ।সুবহানাল্লাহ ।
 
পোশাক যে অনেক বড় নিয়ামত তা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে মানুষেরা! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় বা নিষেধ তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্যেরও উপকরণ। বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক সেটাই উত্তম। এসব মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনাবলীর অন্যতম। এর উদ্দেশ্য মানুষ যাতে উপদেশ গ্রহণ করে।” উল্লেখ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 
 
পোশাক যেমন শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা ও সৌন্দর্যের উপকরণ, তেমনি সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দিক-নির্দেশনা মেনে তা ব্যবহার করা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভের মাধ্যম। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে অন্যান্য বিষয়দির মতো লেবাস-পোশাকের বিষয়েও হুকুম-আহকাম বর্ণনা করা হয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পোশাক সম্পর্কিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন। তাই পোশাক-পরিচ্ছদের ভালো মন্দ মানুষের কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ, চরিত্র ও নৈতিকতা তথা মানবিক জীবনের উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করে এবং অন্তর ও মন-মানসিকতায় গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাই পোশাকের বিষয়টি এ রকম সাধারণ কোনো বিষয় নয় যে, একটি কাপড় কিনলাম এবং তা পরে নিলাম। বরং এক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়ত উনার দিক-নির্দেশনা মেনে চলা জরুরী। 
 
নিম্নে গুটিকয়েক দিক-নির্দেশনা উল্লেখ করা হলো- 
(১) পোশাক এমন আঁটসাট ও ছোট মাপের হতে পারবে না, যা পরলে শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে এবং দৈহিক গঠন ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে উঠে। 
(২) পোশাক এমন পাতলা ও মিহি হতে পারবে না; যাতে শরীর দেখা যায় এবং সতর প্রকাশ পায়। যেমন পাতলা সুতির কাপড়, নেটের কাপড় ইত্যাদি। 
(৩) পোশাকের ক্ষেত্রে কাফির-মুশরিক ও ফাসিক লোকদের অনুসরণ-অনুকরণ ও সাদৃশ্য অবলম্বন করা যাবে না। বিশেষতঃ সেইসব পোশাকের ক্ষেত্রে যা অমুসলিমদের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। 
(৪) পোশাকের মাধ্যমে অহঙ্কার ও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ উদ্দেশ্য হওয়া যাবে না। 
(৫) পুরুষদের জন্য মহিলাদের পোশাক এবং মহিলাদের জন্য পুরুষদের পোশাক পরা এবং একে অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই সব পুরুষের উপর লা’নত করেছেন, যারা মহিদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে (তাদের মতো আকৃতি, তাদের পোশাক ও তাদের চাল-চলন গ্রহণ করে)। আর সেই সব মহিলাদের উপরও লা’নত করেছেন, যারা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।” (বুখারী শরীফ) 
 (৬) পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় করা, বিলাসিতা করার জন্য বা শখের বশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক ক্রয় করা অথবা মাত্রাতিরিক্ত উচ্চমূল্যের পোশাক ক্রয় করা নিষেধ। 
(৭) গায়রে মাহরাম ও পর-পুরুষের সামনে অলংকার ও পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না, যাতে তারা সেদিকে আকৃষ্ট হয়। উল্লেখ্য, যদি জরুরতবশতঃ মহিলাদের ঘরের বাহিরে যেতে হয়, তাহলে মহিলাদের জন্য সমগ্র শরীর ঢাকা যায় এমন বোরকা দ্বারা আবৃত করতে হবে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের কোনো অংশ খোলা রাখা যাবে না। চেহারা, উভয় হাত কব্জিসহ এবং উভয় পা টাখনুসহ আবৃত করবে। পথ-ঘাট দেখার জন্য শুধুমাত্র চোখের সামনে হালকা নেট জাতীয় কাপড় দিতে হবে। হাত ও পায়ে মোজা ব্যবহার করতে হবে। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, টাখনু পর্যন্ত ক্বদম, কব্জি পর্যন্ত হাতের পাতা এবং চেহারা নামাযের সময় সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, ফলে তা নামাযের সময় শুধু খোলা রাখা যাবে। কিন্তু এসব অঙ্গও পর্দার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। ফলে গায়রে মাহরাম ও পরপুরষের সামনে তা খোলা রাখা যাবে না। 
(৮) পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধান করা নিষেধ তথা কবীর গুনাহ।
 
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক পোশাক পরিধান করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

Comments